উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩/০৯/২০২৫ ৮:৫১ এএম

তহবিল সংকটের কারণে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের প্রাণ রক্ষায় নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি-সেফ লাইফগার্ডের কার্যক্রম আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ১ অক্টোবর থেকে সমুদ্রে গোসলে নামা পর্যটকদের ঝুঁকি বাড়বে। কারণ তাদের উদ্ধারে কোনো তৎপরতা থাকবে না। বিকল্প উপায় হিসেবে সব হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে লাইফগার্ড নিয়োগ দিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে জেলা প্রশাসককে বলা হয়েছে, কক্সবাজারের সব হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস থেকে অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে লাইফগার্ড নিয়োগ দিয়ে তাদের বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নাজিম উদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, লাইফগার্ড সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানানোর পর মন্ত্রণালয় থেকে বিকল্প উপায়ে সেবা চালু রাখার নির্দেশনা এসেছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক (ইউকে) সংস্থা রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউটের (আরএনএলআই) অর্থায়নে ২০১২ সাল থেকে সৈকতে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে সি-সেফ লাইফগার্ড। গত ১২ বছরে ২৭ জন লাইফগার্ড কর্মী সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়ার সময় অন্তত ৮০৭ পর্যটককে উদ্ধার করেছেন। একই সময় গুপ্তখাল কিংবা স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে নিহত ৬৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

সি-সেফ লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, তহবিলের সংকটে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সি-সেফ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে জেলা প্রশাসকের তৎপরতায় দাতা সংস্থা প্রকল্পটির মেয়াদ গত জুন পর্যন্ত ছয় মাস বর্ধিত করে। এরপর দ্বিতীয় দফায় ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও তিন মাস বাড়ানো হয়। অর্থের জোগান না হওয়ায় সেপ্টেম্বরেই লাইফগার্ড সেবা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে ২৭ জন লাইফগার্ডসহ মোট ৩৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপরীতে মাসে গড়ে ১৪ লাখ টাকা জোগান দিত সংস্থাটি। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওইসব ব্যক্তি চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।

লাইফগার্ড সদস্য আকরাম ত্রিপুরা বলেন, ‘আমার বাড়ি বান্দরবানের লামা উপজেলায়। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউসের ভাড়া বাসায় থাকি। ১১ বছর ধরে সৈকতে সেবা দিয়ে আসছি। ২০ হাজার টাকা বেতন পাই। এই আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। চাকরি হারালে কীভাবে সংসার চালাব, ভেবে পাচ্ছি না।’
আরেক সদস্য মো. ওসমান বলেন, ‘সমুদ্রে কোনো পর্যটক ভেসে গেলে আমরা ঝুঁকি নিয়ে জীবন বাঁচাই। এখন আমাদের জীবনটাই ঝুঁকিতে পড়ে গেল।’
হোটেল মালিকদের তথ্যমতে, প্রতিবছর কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে আসেন অন্তত ৭০ লাখ মানুষ। পাঁচ কিলোমিটারে লাইফগার্ড সেবা থাকলেও আরও ১১৫ কিলোমিটার সৈকত অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকছে।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার সমকালকে বলেন, শুধু হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিকদের পক্ষে লাইফগার্ডে পুরো অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া পর্যটনের সুবিধাভোগী হোটেল মালিক ছাড়াও সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটিসহ অনেকেই আছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হয়তো লাইফগার্ডে পুরো অর্থ জোগান দেওয়া সম্ভব হতে পারে। তিনি আরও বলেন, লাইফগার্ড দিয়ে সাগরে পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। তার জন্য অনেক কিছু করতে হবে।

পাঠকের মতামত

টেকনাফের কচ্ছপিয়া উপকুল; মালয়েশিয়ায় পাচারের নিরাপদ রুট

টেকনাফের কচ্ছপিয়া উপকুলের বঙ্গোপসাগর দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের ঘটনা ঘটছে। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বঙ্গোপসারের ওই ...

সিন্ডিকেটের কব্জায় কক্সবাজার সৈকত, চলছে দখলযজ্ঞের মহোৎসব

বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার—যা একদিকে প্রকৃতির অমূল্য দান, অন্যদিকে কোটি দেশি-বিদেশি পর্যটকের প্রিয় গন্তব্য। ...

বিতর্কিত মন্তব্যে আলোচিত মুফতি আমীর হামজা কক্সবাজারে: সতর্ক করলো জামায়াত

 বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আলোচিত ইসলামী বক্তা মাওলানা মুফতি আমির হামজা’কে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ...